গল্প- বঙ্গে চৈত্র সেল

বঙ্গে চৈত্র সেল
– জয়তী মিত্র

 

 

চৈত্র মাস এলেই তিথির মনটা আনন্দে নেচে ওঠে। কেনাকাটা করতে তিথি খুব ভালোবাসে। এই সময় তার শয়নে, স্বপনে, জাগরণে শুধু সেল, সেল আর সেল। সারাক্ষণ সেলের জিনিসপত্রগুলো মাথায় ঘুরতে থাকে।
কত সস্তায় কত জিনিস চারিদিকে। শাড়িতে পঞ্চাশ শতাংশ ছাড়। সালোয়ার, কুর্তি, নাইটি, ঘর সাজানোর জিনিস, শৌখিন জিনিস এমন কি বাসনপত্রেও ছাড়। উফ্ কি মজা। মনের মধ্যে লাড্ডু ফুটতে লাগলো তিথির।
ছাড়, ছাড়,ছাড়…
মনে মনে গান গাইতে লাগলো। অফিস থেকে ফিরতেই স্বামী রাহুল হাত, মুখ ধোবার সাথে সাথে চা, খাবার সব মুখের কাছে ধরল তিথি। অন্য দিন চা চাইলে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। তিথির স্বামী রাহুল ভাবলো নিশ্চয়ই ডাল মে কুছ কালা হ্যায়। কিছু চাইবে মনে হয়, তাই এত খাতির।
চায়ে চুমুক দিয়ে রাহুল বললো, আজ কি চাহিদা আছে বলে ফেলো, চাহিদা থাকলেই তো এই আদর,অ্যাপায়নটা বেশি পরিমাণে জোটে..
তিথি কোনো ভনিতা না করেই বললো, চৈত্র সেল শুরু হয়ে গেছে নিয়ে যাবে? রাহুল একটু বেরসিক, কোনো কিছুতেই তার কোনো উচ্ছ্বাস নেই। রাহুল বললো, এতক্ষণে বোধগম্য হলো এত আদরের কারণ কি?
তিথি বললো, চলো না, কটা নাইটি, কুর্তি, তোমার গেঞ্জি, বারমুডা, জিন্স আর বিছানার চাদর কিনে আনি। আমার এক বান্ধবী কাল কত বাজার করে এনেছে, খুব সস্তায় পেয়েছে সব।
রাহুল লাফ দিয়ে উঠে বললো, না, না আমি ওইসব পড়বো না, আর তোমার সাথে যাবো ও না। এক ধোয়াতেই জিন্স হাফ প্যান্ট হয়ে যাবে, গেঞ্জি পেটের ওপর উঠবে আর বারমুডার কথা বলতেই লজ্জা লাগছে। এই ব্যাপারে আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে। তুমি তোমার বান্ধবীর সাথে যাও। যা খুশি কেনো, দেখো পরে যেন পস্তাতে না হয়।
তিথি রাগ করে বললো, তাই যাব, তোমার মত বেরসিক লোকের সাথে সেলের জিনিস কিনতে গেলে আমার কেনাকাটা মাটি হয়ে যাবে।

রাহুল বললো, জিনিস কিনবে সবসময় ভালো দোকান থেকে, আর দাম দিয়ে কিনলে বহুদিন পরতে পারবে। না হলে সস্তার তিন অবস্থা হবে।
তিথি রাহুলের কথাতে পাত্তা না দিয়ে পরদিন বান্ধবী সুস্মিতাকে সাথে নিয়ে সন্ধ্যা বেলায় গেল সেল থেকে জিনিস কিনতে।
ওখানে গিয়ে দুই বান্ধবী আনন্দে আত্নহারা। নাইটি, কুর্তিতে পঞ্চাশ শতাংশ ছাড়। শুধু এক দিনের জন্য।
আনন্দে চারটে নাইটি, চারটে কুর্তি নিল তিথি। তিথির বান্ধবীও কোনো কিছু বাদ দিলো না। সব কিছুই অল্প বিস্তর কিনলো। তারপর ফুচকার দোকানেও একটা করে ফাউ পেল। খুশিতে ডগমগ হয়ে দুই বান্ধবী যে যার বাড়ি ফিরে গেল।
তারপর দিন তিনেক পোশাকগুলো নিয়ে খুব নাড়াচাড়া করলো। খুব পছন্দ হয়েছে সবগুলো। একটা নীল প্রিন্টেড নাইটি স্নান করে উঠে পড়ল। মনে খুব ফুর্তি। এত কমদামে পেয়েছে ভাবতেই ভালো লাগছে তিথির।
পরদিন নাইটি ধুতে গিয়েই তিথির চোখ জলে ভরে গেল। নাইটির কাঁচা রঙ সব ধুয়ে গেছে। তারপর মনের দুঃখে সেটা পড়তে যাবে, দেখে সেটা ফ্রকে পরিনত হয়েছে। দুটো কুর্টিতে ফুটো বেরিয়েছে। রাতের অন্ধকারে ভিড়ের মধ্যে ভালো করে দেখতে পায়নি বেচারী।
সাথে সাথে বান্ধবীর অবস্থা জানার জন্য ফোন করলো। ওপাশ থেকে সুস্মিতা কাঁদো গলায় বললো, তারও একই অবস্থা।
দুজনে মিলে দিন দুয়েক পর আবার সেই ফুটপাথে গেল দোকানদারকে নালিশ জানাতে। গিয়ে দেখল সে পগার পার। ফুটপাথের স্থায়ী দোকানদার সে নয়। একদিনের জন্য খুব সস্তায় সব বেচে চলে গেছে। আরো কান্না পেল দুজনের। তিথি বললো, বরের কথা না শোনার ফল তাকে এখন ভুগতে হচ্ছে।
বাড়ি আসার পর সব শুনে রাহুলের হাসি আর থামতেই চায় না। তিথিকে বললো, ঠিক হয়েছে, দেখো কেমন লাগে, বারণ করেছিলাম তখন আমার কথা ভাল লাগছিল না। খুব ভালো শিক্ষা হয়েছে। আর এই জীবনে সেলের জিনিস কিনতে যাবে না। আবার হাসতে শুরু করলো রাহুল আর টিপ্পনী কেটে বললো, নাইটি, থুড়ি ফ্রকটা পরো তো দেখি কেমন লাগছে? তিথির দুচোখ বেয়ে তখন নোনা জলের ধারা বইছে।

Loading

Leave A Comment